দীর্ঘদিন সুস্থ শরীর পেতে চাইলে হার্ভার্ডের গবেষণা অনুযায়ী এই ৫ অভ্যাস চর্চা করুন
হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির একটি দীর্ঘমেয়াদি গবেষণায় উঠে এসেছে এমন কিছু তথ্য যা আমাদের জীবনযাপনের ধরন নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে। এই গবেষণায় দেখা গেছে, কয়েকটি সাধারণ অভ্যাস নিয়মিত চর্চা করলে একজন মানুষ শুধু দীর্ঘায়ু পান না, বরং পুরো জীবনটাই থাকতে পারেন উদ্যমী, সুস্থ ও প্রাণবন্ত।
যদিও আমরা প্রায়ই স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের কথা শুনি, কিন্তু বাস্তবে তার চর্চা করতে পারি খুব কম সময়ই। অথচ, হার্ভার্ড স্কুল অফ পাবলিক হেলথ-এর গবেষকরা বলছেন — মাত্র ৫টি অভ্যাসকে প্রতিদিনের জীবনে অন্তর্ভুক্ত করতে পারলেই গড়ে ১২ থেকে ১৪ বছর পর্যন্ত বাড়ানো যায় আমাদের জীবনকাল।
১️⃣ স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া
খাবার হলো শরীরের জ্বালানি। তাই যা খাই, তার উপরই নির্ভর করে আমাদের স্বাস্থ্য। হার্ভার্ডের গবেষণায় বলা হয়েছে, বেশি করে শাকসবজি, ফল, সম্পূর্ণ শস্য, মাছ এবং বাদাম খেতে হবে। অপরদিকে, অতিরিক্ত চিনি, প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং অতিরিক্ত তেল-মশলা এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ।
একটি সুষম খাদ্য কেবল ওজন নিয়ন্ত্রণেই সাহায্য করে না, এটি হৃদযন্ত্র, মস্তিষ্ক এবং হরমোনের ভারসাম্য রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
২️⃣ নিয়মিত ব্যায়াম করা
হার্ভার্ডের গবেষকরা প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিটের মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম করার পরামর্শ দিয়েছেন। হাঁটা, দৌড়ানো, যোগব্যায়াম বা সাইক্লিং — যেকোনোটি হতে পারে।
শরীরচর্চা কেবল শরীরের পেশি শক্তিশালী করে না, এটি মস্তিষ্কে ‘হ্যাপি হরমোন’ নিঃসরণ বাড়ায়, যা মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে। এছাড়া এটি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা এবং হৃদরোগের ঝুঁকিও কমায়।
৩️⃣ পর্যাপ্ত ঘুম
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম অত্যাবশ্যক। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম যারা নেন, তাদের ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হয় এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
অপর্যাপ্ত ঘুম শরীরে কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা মানসিক চাপ, ডিপ্রেশন এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং সকালে উঠার অভ্যাস করুন।
৪️⃣ ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকা
হার্ভার্ডের গবেষণায় দেখা গেছে, ধূমপায়ীদের গড় আয়ু ১০ বছর পর্যন্ত কমে যেতে পারে। তেমনি অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন লিভার ও হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করে।
যারা সম্পূর্ণভাবে ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে দূরে থেকেছেন, তাদের গড় আয়ু অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি। তাই আজ থেকেই এই দুটি অভ্যাস থেকে মুক্ত হোন — এটি আপনার জীবনের সবচেয়ে বড় উপহার হতে পারে।
৫️⃣ মানসিক শান্তি ও ইতিবাচকতা বজায় রাখা
হার্ভার্ডের গবেষণায় মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন কিছু সময় নিজের জন্য রাখুন — ধ্যান করুন, বই পড়ুন, পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান।
মানসিক প্রশান্তি শুধু মনকে নয়, শরীরকেও সুস্থ রাখে। যারা নিয়মিত ধ্যান, প্রার্থনা বা ইতিবাচক চিন্তার চর্চা করেন, তাদের স্ট্রেস হরমোন অনেক কম থাকে এবং ঘুমও ভালো হয়।
শেষ কথা
জীবনের প্রতিটি দিনে আমরা শত ব্যস্ততার মাঝে নিজেকে ভুলে যাই। অথচ, এই ৫টি ছোট পরিবর্তন আমাদের জীবনে বিশাল প্রভাব ফেলতে পারে। হার্ভার্ডের গবেষকরা বলছেন, “আপনি যত তাড়াতাড়ি এই অভ্যাসগুলো শুরু করবেন, তত দ্রুতই পাবেন তার সুফল।”
তাই আজই সিদ্ধান্ত নিন — নিজেকে ভালো রাখবেন, নিজের শরীর ও মনের যত্ন নেবেন। কারণ সুস্থ জীবনই সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ।