
বিটরুট জুস: সুপারফুডের জাদুকরী গুণাবলী ও স্বাস্থ্য উপকারিতা
শরীর সুস্থ রাখতে পেট পরিষ্কার রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর মধ্যে একটি। পেট পরিষ্কার রাখার জন্য নিয়মিত সঠিক খাবার ও পানীয় গ্রহণ করা জরুরি। এর মধ্যে একটি অন্যতম কার্যকর পানীয় হল বিটরুট জুস। এটি শুধুমাত্র পেট পরিষ্কার রাখে না, বরং শরীরের ত্বক, চুল, এবং হৃদপিণ্ডের যত্নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই বিটরুটকে “সুপারফুড” বলা হয়। এই লেখায় আমরা বিটরুট জুসের উপকারিতা, তৈরির প্রক্রিয়া এবং নিয়মিত পান করার বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
বিটরুট কেন সুপারফুড?
বিটরুটে রয়েছে অসংখ্য ভিটামিন ও খনিজ উপাদান। এর মধ্যে রয়েছে ম্যাঙ্গানিজ, ফোলেট, রিবোফ্লাবিন (ভিটামিন বি২), পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন, জিংক এবং আয়োডিন। এছাড়া এতে ভিটামিন এ, বি৬, এবং সি-এর মতো প্রয়োজনীয় ভিটামিনও থাকে। বিটরুটে থাকা ফাইবার এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীর থেকে টক্সিন বের করতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
বিটরুট জুসের রং যেমন চোখ ধাঁধানো, এর উপকারিতাও তেমনি চমকপ্রদ। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, বিটরুট জুস রক্ত পরিষ্কার করে, শরীরে প্রাকৃতিক শক্তি যোগায় এবং ওজন কমাতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
আরও পড়ুন :
খালি পেটে লবঙ্গ খাওয়ার অসাধারণ স্বাস্থ্য উপকারিতা
বিটরুট জুসের স্বাস্থ্য উপকারিতা
১. ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি
ত্বক আমাদের শরীরের বাহ্যিক সৌন্দর্যের প্রতীক। কিন্তু নানা কারণে ত্বক তার প্রাকৃতিক লাবণ্য হারাতে পারে। ব্রণ, দাগছোপ, এবং শুষ্ক ত্বকের সমস্যায় অনেকেই ভুগে থাকেন। বিটরুট জুসে থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বকের টিস্যু মেরামত করে এবং ত্বকের টোন উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।
বিটরুট রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে, যা ত্বকে প্রাকৃতিক গোলাপি আভা নিয়ে আসে। যারা মসৃণ ও নিখুঁত ত্বক পেতে চান, তাদের জন্য এটি একটি আদর্শ পানীয়।
২. প্রাকৃতিক শক্তি বৃদ্ধি
কাজের মাঝে ক্লান্তি অনুভব করলে অনেকেই চা বা কফির দিকে ঝোঁকেন। কিন্তু ক্যাফেইনের পরিবর্তে যদি প্রাকৃতিক পানীয় পান করা যায়, তবে তা শরীরের জন্য অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর। বিটরুট জুস দ্রুত শক্তি বৃদ্ধি করে এবং শারীরিক দুর্বলতা কাটাতে সাহায্য করে।
এই জুসে থাকা প্রাকৃতিক শর্করা শরীরকে দীর্ঘসময় ধরে এনার্জি প্রদান করে। জিমে যাওয়ার আগে অথবা সকালের ব্রেকফাস্টে এক গ্লাস বিটরুট জুস পান করলে আপনি সারাদিন সতেজ থাকবেন।
আরও পড়ুন :
সারাদিন কর্মক্ষম ও শক্তিশালী থাকার উপায়
৩. ওজন কমাতে সাহায্য করে
অতিরিক্ত ওজন একাধিক শারীরিক সমস্যার কারণ হতে পারে। বিটরুট জুস কম ক্যালোরি এবং বেশি ফাইবারযুক্ত হওয়ায় এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে। ফাইবার পেট ভরা রাখে এবং ক্ষুধা কমিয়ে দেয়।
যারা জাঙ্ক ফুড এবং কোল্ড ড্রিঙ্কস পছন্দ করেন, তাদের জন্য এটি একটি স্বাস্থ্যকর বিকল্প। নিয়মিত এই পানীয় পান করলে শরীর থেকে অতিরিক্ত ফ্যাট কমানো সহজ হবে।
৪. হৃদপিণ্ডের যত্ন নেয়
বিটরুট জুস রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। এটি হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
যারা হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকিতে রয়েছেন, তাদের জন্য এটি একটি প্রাকৃতিক প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত বিটরুট জুস পান করলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
আরও পড়ুন :
জীবনে সুখী হতে হলে আজই বাদ দিন এই ১০ অভ্যাস
৫. প্রাকৃতিক ডিটক্স পানীয়
শরীর থেকে টক্সিন বের করার জন্য অনেকেই ডিটক্স পানীয় ব্যবহার করেন। বিটরুট জুস প্রাকৃতিকভাবে লিভার পরিষ্কার করে এবং শরীরের টক্সিন দূর করতে সহায়তা করে।
এটি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও দূর করে। যারা নিয়মিত পেট পরিষ্কার রাখতে চান, তাদের জন্য এটি একটি আদর্শ পানীয়।
কিভাবে তৈরি করবেন বিটরুট জুস?
বিটরুট জুস মজাদার এবং স্বাস্থ্যকর করার জন্য আপনি এটি বিভিন্ন উপাদানের সঙ্গে মিশিয়ে তৈরি করতে পারেন।
উপকরণ:
১টি মাঝারি আকারের বিটরুট
১টি আপেল
১টি গাজর
১ টেবিল চামচ লেবুর রস
১ কাপ পানি
তৈরি করার পদ্ধতি:
1. বিটরুট, আপেল এবং গাজর ভালোভাবে ধুয়ে নিন।
2. এগুলো ছোট টুকরো করে কেটে ব্লেন্ডারে দিন।
3. ১ কাপ পানি যোগ করে ভালোভাবে ব্লেন্ড করুন।
4. ছেঁকে নিয়ে জুস বের করুন।
5. উপরে লেবুর রস মিশিয়ে পরিবেশন করুন।
আরও পড়ুন :
টিনএজ বয়সে ওজন বাড়ানোর সহজ উপায়: স্বাস্থ্যকর পদ্ধতিতে স্থায়ী ফলাফল
কখন এবং কতটুকু পান করবেন?
প্রতিদিন সকালে নাশতার পর ১ গ্লাস বিটরুট জুস পান করতে পারেন। অতিরিক্ত জুস পান না করাই ভালো, কারণ এতে থাকা প্রাকৃতিক চিনি বেশি পরিমাণে গ্রহণ করলে তা শরীরের ক্ষতি করতে পারে।
বিটরুট জুস পান করার সময় সতর্কতা
যদিও বিটরুট জুস অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর, তবে কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি:
যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তাদের জুসের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া উচিত।
প্রতিদিন ১ গ্লাসের বেশি পান করবেন না।
বেশি পরিমাণে বিটরুট জুস পান করলে মূত্রের রঙ লালচে হতে পারে, যা স্বাভাবিক।
বিটরুট জুসের উপকারিতার সংক্ষিপ্ত তালিকা:
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি
প্রাকৃতিক এনার্জি প্রদান
ওজন কমাতে সহায়ক
হৃদপিণ্ডের যত্ন
ডিটক্স পানীয়
শেষ কথা
বিটরুট জুস একটি সহজলভ্য এবং কার্যকর পানীয় যা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি শুধু ত্বক আর পেটের যত্নই নেয় না, বরং হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখে এবং ওজন কমাতেও সাহায্য করে। নিয়মিত এক গ্লাস বিটরুট জুস পান করার অভ্যাস গড়ে তুলুন এবং শরীরের প্রাকৃতিক স্বাস্থ্য উপভোগ করুন।
বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন :
প্রতিদিন বিটরুট খেলে পাবেন ৬টি অবিশ্বাস্য উপকার
বিটরুটের 12 স্বাস্থ্য উপকারিতা