
টিনএজ বয়সে ওজন বাড়ানোর সহজ উপায়: স্বাস্থ্যকর পদ্ধতিতে স্থায়ী ফলাফল
টিনএজ বয়স (১৩–১৯ বছর) একজনের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময়টাতে ওজন কম থাকা শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্যের বিষয় নয়, বরং এটি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও প্রভাব ফেলে। তাই এই বয়সে সঠিক উপায়ে ওজন বাড়ানো অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
ওজন বাড়ানোর জন্য শুধু বেশি খাওয়াই নয়, বরং সঠিক স্বাস্থ্যকর খাবারের অভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম এবং মানসিক ভারসাম্য দরকার।
টিনএজ বয়সে ওজন কম হওয়ার কারণ
- পুষ্টির ঘাটতি: সঠিকভাবে পুষ্টিকর খাবার না খাওয়া।
- উচ্চ বিপাকীয় হার: শরীর দ্রুত ক্যালোরি পুড়িয়ে ফেলে।
- মানসিক চাপ: পড়াশোনা ও স্ট্রেস ক্ষুধা কমিয়ে দেয়।
- হরমোন পরিবর্তন: বয়ঃসন্ধিকালে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা।
- জিনগত কারণ: পরিবারের জেনেটিক প্রভাবেও ওজন কম হতে পারে।
ওজন কম থাকলে ক্লান্তি, দুর্বলতা, মনোযোগহীনতা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়। তাই এই বিষয়টি অবহেলা না করাই ভালো।
টিনএজ বয়সে ওজন বাড়ানোর সহজ পদ্ধতি
১. পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন
ওজন বাড়ানোর জন্য উচ্চ ক্যালোরি ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার প্রয়োজন। যেমন— ভাত, রুটি, আলু, ডিম, দুধ, মুরগির মাংস, ডাল, বাদাম, মাখন ও কলা।
সকালের নাস্তায় দুধ ও ডিম, দুপুরে ভাত-মাংস, আর রাতে হালকা খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন। বিস্তারিত জানতে পড়ুন নিয়মিত ঘুম ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে লেখা আমাদের গাইড।
২. খাবারের সময়সূচি মেনে চলুন
দিনে অন্তত ৫–৬ বার খাওয়ার চেষ্টা করুন। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে নাস্তা, দুপুর ও রাতের খাবার গ্রহণ করুন। ছোট ছোট স্ন্যাকস যোগ করুন— যেমন কলা, বাদাম, স্মুদি ইত্যাদি।
৩. হাই-ক্যালোরি স্মুদি পান করুন
ওজন বাড়াতে ঘরে তৈরি স্মুদি দারুণ কার্যকর। উদাহরণস্বরূপ:
- কলা + দুধ + পিনাট বাটার
- আম + দুধ + বাদাম
৪. প্রোটিন শেক যুক্ত করুন
প্রয়োজনে প্রোটিন শেক নিতে পারেন, তবে সবসময় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী। অতিরিক্ত সাপ্লিমেন্ট শরীরের ক্ষতি করতে পারে।
ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন বাড়ানো
শুধু খেয়ে নয়, ব্যায়ামের মাধ্যমে পেশি গঠনের ফলে ওজন বাড়ানো আরও স্বাস্থ্যকর হয়। বাড়িতে করা যায় এমন সহজ ব্যায়াম শুরু করুন প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিটের জন্য।
- হালকা ওজন তোলা (ডাম্বেল)
- পুশ-আপ ও স্কোয়াট
- কার্ডিও ব্যায়াম সীমিত করুন
ব্যায়াম করলে শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে এবং ক্ষুধাও বাড়ে।
পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম
প্রতিদিন অন্তত ৮–৯ ঘণ্টা ঘুম অপরিহার্য। ঘুমের সময় শরীর পেশি পুনর্গঠন করে ও হরমোন ভারসাম্য রক্ষা করে।
উদাহরণস্বরূপ খাদ্য তালিকা
- সকালের নাস্তা: ডিম, দুধ, পাউরুটি
- মধ্যাহ্নভোজন: ভাত, মাছ/মুরগি, ডাল, সবজি
- সন্ধ্যা: কলা, বাদাম, স্মুদি
- রাতের খাবার: হালকা ভাত বা রুটি, ডাল, সবজি
ওজন বাড়ানোর সময় যেসব ভুল এড়াতে হবে
- অতিরিক্ত তেল বা জাঙ্ক ফুড খাওয়া
- অপর্যাপ্ত পানি পান
- অনিয়মিত ঘুম
- অতিরিক্ত ব্যায়াম করা
ধৈর্য ও মানসিক শক্তি বজায় রাখুন
ওজন বাড়ানো সময়সাপেক্ষ একটি প্রক্রিয়া। সপ্তাহে ০.৫–১ কেজি ওজন বাড়ানোই আদর্শ। ধৈর্য ধরে নিয়মিত থাকুন।
বিশ্বস্ত সূত্র অনুযায়ী, স্বাস্থ্যকর ওজন বৃদ্ধির সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়াম বজায় রাখা। বিস্তারিত পড়ুন Harvard Health-এর নির্দেশনা এবং WHO-এর পুষ্টি নির্দেশিকা।
উপসংহার
টিনএজ বয়সে স্বাস্থ্যকরভাবে ওজন বাড়াতে চাইলে খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম ও ঘুম — এই তিনটি বিষয়কে সমন্বয় করতে হবে। অল্প সময়ের ফলাফলের পেছনে না ছুটে ধৈর্য ধরে এগোলে স্থায়ী ফল পাওয়া সম্ভব।
নিজের শরীরকে ভালোবাসুন এবং Carefully Careless BD-এর সাথে থাকুন নিয়মিত স্বাস্থ্য ও জীবনধারা বিষয়ক আরও টিপস জানতে।